| ২৩শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ |১৬ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি October 8, 2025, 9:15 pm
Title :
পূর্বধলায় গনঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা সাবেক নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক জজ মান্নানের সম্পদের খোঁজ পূর্বধলা উপজেলার বিএনপি কর্মী “হেলালী”এলাকাবাসীর চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে টাঙ্গাইল-৭ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী রিয়ার এডমিরাল মোস্তাফিজুর রহমান বাকেরগঞ্জে ধরাছোঁয়ার বাইরে ভূমিদস্যু আলু রশিদ ( বিএনপির এক নেতার ছত্রছায়ায় চালাচ্ছেন তার অপকর্ম) বাকেরগঞ্জে আদালতের আদেশ অমান্য করে আওয়ামী নেতা রশিদের ঘর নির্মানের চেষ্টা, বাধা দিলে তিনজনকে পিটিয়ে আহত রাজধানীতে ভোরে সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে ম্যানহোল ঢাকনা চুরি বরিশালের তরুণ সমাজকর্মী মো: সিফাত ই মঞ্জুর রোমান অর্জন করলেন ন্যাশনাল ইনফ্লুয়েন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ গাজীপুর জেলা সাংবাদিক ঐক্য পরিষদ নির্বাচন কাশেম সভাপতি রফিক সম্পাদক বাকেরগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেন ডা :শাহারিয়ার মিঞা সাহিদ

সাবেক নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক জজ মান্নানের সম্পদের খোঁজ

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫
  • 12 Time View

প্রথম বাংলা : সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এবং নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক কেএম আব্দুল মান্নান। তিনি মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় একটি সিন্ডিকেট গড়ে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগের অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. সাহিদুর রহমান ও উপসহকারী পরিচালক মো. মনজুরুল ইসলাম মিন্টুর সমন্বয়ে গঠিত দুই সদস্যের একটি দল কাজটি করছে।

জানা গেছে, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের আস্থাভাজন ছিলেন আব্দুল মান্নান”তিনি আইনমন্ত্রীর প্রভাবকে ব্যবহার করে সারা দেশের রেজিস্ট্রি অফিসগুলোকে এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনি নিয়ন্ত্রণের কাজটি কবজায় রাখতে বিভিন্ন জেলা রেজিস্ট্রার ও সাবন্ডরেজিস্ট্রারকে নিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে কর্মকর্তান্ডকর্মচারীদের পদোন্নতি ও ভালো জায়গায় পোস্টিং দিতেন এবং তাদের মাধ্যমেই সাবন্ডরেজিস্ট্রার অফিস থেকে মাসে কোটি কোটি টাকা মাসোহারা আদায় করতেন।

গেল বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পড়তে শুরু করে দুদকে। কমিশন অভিযোগের যাচাইন্ডবাছাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

এবার অনুসন্ধান শুরু হয়েছে নিবন্ধন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিদর্শক, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ কেএম আব্দুল মান্নানের ঘুষ, দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অভিযোগের। চলতি বছর ৮ এপ্রিল অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধান দল আব্দুল মান্নানের ঘুষ, দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগসংক্রান্ত নথিপত্র চেয়ে নিবন্ধন মহাপরিদর্শকের দপ্তরে চিঠি পাঠায়। চিঠিতে বলা হয়েছে, সাবেক নিবন্ধন মহাপরিদর্শক কেএম আব্দুল মান্নানসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে।

অনুসন্ধানের স্বার্থে সাবেক নিবন্ধন মহাপরিদর্শক কেএমআব্দুল মান্নানের দায়িত্ব পালনকালে সাবন্ডরেজিস্ট্রার নিয়োগের ও বদলির তালিকা, বদলি স্থগিত ও পরিবর্তনের তালিকা, বিভিন্ন পদে কর্মচারী নিয়োগ ও বদলির তালিকা,নকল নবিশ নিয়োগে তালিকা এবং দলিল লেখকদের লাইসেন্সন্ডসনদ প্রদানের তালিকাসহ এসব নথির নোটশিটের ফটোকপি দিতে হবে।

এ ছাড়া জেলা রেজিস্ট্রার রায়হান মন্ডল,অফিস স্টাফ মোয়াজ্জেম, টাইপিস্ট সাইফুল এবং পিএ আজমলের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা এবং বর্তমান কর্মস্থলের তথ্য চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সাবেক নিবন্ধন মহাপরিদর্শক কেএম আব্দুল মান্নানের ব্যক্তিগত নথির ফটোকপি দিতে বলা হয়েছে।

দুদকের কাছে থাকা অভিযোগে বলা হয়, সারা দেশে ৪৯৭টি সাবন্ডরেজিস্ট্রার অফিস রয়েছে। ২০১২ সালের ১৫ মার্চ নিবন্ধন পরিদপ্তরের মহাপরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় ঝিনাইদহের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল মান্নানকে। তার চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে তাকে এক বছরের চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধন পরিদপ্তরকে অধিদপ্তরে রূপান্তর করা হয়। ওই সময়ে ৪৯১টি নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়। এসব পদে নিয়োগে লাখন্ডলাখ টাকা ঘুষের লেনদেন হয়।

অভিযোগে বলা হয়, সাবন্ডরেজিস্ট্রার নিয়োগে ১০ থেকে ২৫ লাখ ঘুষ নেওয়া হয়। তবে পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে ননন্ডক্যাডার নিয়োগের পর থেকে ঘুষের মাত্রা কমে গেছে। তবে নিয়োগে কমলেও বদলিতে ঘুষের রেট উঁচু পছন্দের কর্ম স্থলে যেতে ঘুষ দিতে হতো ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকা। নিয়ম অনুযায়ী, আইন মন্ত্রণালয় দুই বছর পরপর সাবন্ডরেজিস্ট্রার বদলি করে থাকে। এর আগে কেউ বদলি হতে চাইলে আবেদন করতে হয়। আর তখনই পছন্দের জায়গার জন্য ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়।

আনিসুল হক আইনমন্ত্রী থাকাকালে বদলি ও পদোন্নতির বিষয়টি ঠিক করতেন নিবন্ধন মহাপরিদর্শক। সাবন্ডরেজিস্ট্রি অফিস থেকেও মাসোহারা আসত নিবন্ধন অধিদপ্তরে, যার ভাগ মন্ত্রী ও নিবন্ধন মহাপরিদর্শকসহ অন্যরা পেতেন।

অভিযোগ রয়েছে, আব্দুল মান্নান নিবন্ধন মহাপরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে তার কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর রোডের ৬২/সি এবং ৩ নম্বর সেক্টরের ৮ নম্বর রোডের ৯ নম্বর প্লট দুটি তার নামে থাকার তথ্য দুদকের কাছে রয়েছে। এখন তার ব্যাংক, বীমা, আয়করের নথিপত্রের পর্যালোচনা চলছে। তার আর কী কী সম্পদ রয়েছে, তারও সন্ধান চলছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় দেশের ৭৮ শতাংশ দলিল সম্পাদনে অনিয়ম ও দুর্নীতি সংঘটিত হওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে দলিল সম্পাদনকালে ৩০ দশমিক ১০ শতাংশ, ২০১৫ সালে ৪৬ দশমিক ২০ শতাংশ এবং ২০১৭ সালে ৪২ দশমিক ৫০ শতাংশ সেবাগ্রহীতা দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। ওই সময়ে জমির দলিল সম্পাদনে ৬ হাজার ৬৫৩ থেকে ১১ হাজার ৮৫২ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এ ছাড়া সাবন্ডরেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকরা যোগসাজশ করে ঘুষের বিনিময়ে জমির শ্রেণি পরিবর্তন ও মূল্য কমিয়ে দলিল সম্পাদন করেছেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, সাবন্ডরেজিস্ট্রার অফিসগুলোতে ‘অফিস খরচ’ হিসেবে বিধিবহির্ভূতভাবে অর্থ আদায় করা হয়ে থাকে। লাখে শতকরা হিসাবে বা থোক হিসেবে নেওয়া হতো। দুই লাখ টাকার জমি ৫০ হাজার ক্রয়মূল্য দেখিয়ে দলিল সম্পাদনে সাবন্ডরেজিস্ট্রি অফিসে ১২ন্ড১৩ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হতো। দলিল নিবন্ধনকালে সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে ১ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত আদায় করা হতো। ২০১৪ন্ড১৫ অর্থবছরে ৩৪ লাখ ১৯ হাজার ৫৪২টি দলিল নিবন্ধন হয়েছে।

এতে আয় হয়েছে ৮ হাজার ৭৯২ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার ২৮২ টাকা। ২০১৭ন্ড১৮ অর্থবছরে ৩৬ লাখ ৭২ হাজার ৪২৮টি দলিল নিবন্ধনে আয় হয়েছে ১০ হাজার ১২৯ কোটি ৮৪ লাখ ২৮ হাজার ৯৯ টাকা। মূল্য কম দেখিয়েই এ পরিমাণ আয় হয়েছে। যথাযথ মূল্য ধরে দলিল করা হলে আয় হতো আরও কয়েকগুণ বেশি।

এ উপায়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তান্ডক র্মচারীরা হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব দুর্নীতি থেকে যে পরিমাণ অনৈতিক লেনদেন হয়েছে, তার একটি অংশ নিবন্ধন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা পেতেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category