জসিম রানা, ভোলা। ভোলা ডিইএমও জেলা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান (ফিঙ্গার প্রিন্ট) অফিসের সহকারি পরিচালক মোশারেফ হোসেনের দীর্ঘ দিন যাবৎ বিদেশগামী লোকদের বিভিন্ন ভাবে জিম্মি করে ঘুষ বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে। জানাগেছে, ভার অফিসে ফিংগার দিতে আসা লোকেরা টাকা না দিলে কাগজ পত্রে সমস্যা ও সার্ভারে সমস্যা চলছে বলে লোকজনদের রোদের ভিতর ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দার করিয়ে রাখে। ২২ এপ্রিল সোমবার সে প্রকাশ্যে ঘুষ নেয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগে ভাইড়াল হলে, ফুসে ওঠে ভোলার মিডিয়া কর্মীরা।
ওই দিন সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১২ পর্যন্ত ডিইএমও (ফিঙ্গার প্রিন্ট) ভোলা অফিসে সোর্স ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই অফিসে অবস্থান নেয় মিডিয়া কর্মীদের একটি অনুসন্ধান টিম। প্রতিদিনের মত ফিঙ্গার দিতে আসা সবার কাছ থেকে অবৈধভাবে সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা থেকে ২৫শ টাকা আদায় করে ফিঙ্গার দেওয়ার ব্যবস্থা করেন অভিযুক্ত এই কর্মকর্তা। অনুসন্ধানী টিম ওয়েটিং রুমে অবস্থানরত সবার সাথে কথা বলে তথ্য সংগ্রহের একপর্যায়ে বোরহানউদ্দিন উপজেলা থেকে ফিঙ্গার দিতে আসা মোহাম্মদ রুবেল জানান, ভিসার ফটো কপি না থাকায় অতিরিক্ত ১২শ টাকা দাবি করেন। কিন্তু ভিসার নাম্বার ও আবেদন কপি থাকলে কাজ করা যায় বলে জানান অন্য এক কর্মকর্তা। তার কাছে ১২শ টাকা না থাকায় তিনি চলে যাচ্ছেন এমন সময় অনুসন্ধানী টিমের এক সদস্য তাকে ১২শ টাকা দিয়ে টাকার নাম্বার ছবি তুলে গোপন ক্যামেরা নিয়ে ফিঙ্গার দিতে ওই কর্মকর্তার অফিস কক্ষে যান। তার সঙ্গে থাকা অনুসন্ধানী টিমের সদস্যকে কিছুটা সন্দেহ হলে কাজ না করার কিছুটা অপারগতা প্রকাশ করে। কিন্তু অনুসন্ধানী টিমের সদস্য রুবেলের বড় ভাই ও বেসরকারি কলেজের শিক্ষক পরিচয় দিলে পূর্ণরায় পূর্বের রুপ ফিরে আসে সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেনের। তখন এই কর্মকর্তা জানান, বিভাগীয় ও অধিদপ্তরের অডিট টিম ভোলায় আসলে বিশাল অঙ্কের ঘুষ দিতে হয়। মূলত সেইজন্য তিনি এই ঘুষ গ্রহন করে থাকেন।
একসময় অনুসন্ধানী টিমের উপস্থিতি টের পেয়ে সকল ঘুষের টাকা ব্যাগে করে তার অফিস সহকারীর মাধ্যমে পাঠানোর সময় হাতে নাতে ঐ ব্যাগে অনুসন্ধানী টিমের নাম্বার ফালানো টাকাসহ ভুক্তভোগীদের সহযোগে ধরে ফেলে। পরে এই বিষয়ে ১০/১২ জন ভুক্তভোগীসহ অভিযুক্ত এই কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি তার সৎত্তর দিতে পারেনি। পরে একপর্যায়ে অনুসন্ধানী টিমকে বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করার ব্যর্থ চেষ্টায় অফিস রুম তালা মেরে পালিয়ে যান।
অভিযোগে জানা যায়, প্রবাসে যাওয়ার জন্য সমগ্র ভোলা থেকে গড়ে দৈনিক ৮০ থেকে ১০০ জন প্রবাসী ফিঙ্গার দিতে আসেন। তার অফিসে বৈধ কোনো টাকার লেনদেন না থাকলেও ফিঙ্গার দিতে আসা সকলের কাছ থেকে গড়ে ৫০০ টাকা করে নিলেও (৮০×৫০০) ৪০ হাজার টাকা অবৈধ ঘুষ গ্রহন করেন। অর্থাৎ প্রতি মাসে তিনি ভোলার মানুষের কাছ থেকে সম্পূর্ণ অবৈধ (৪০,০০০×৩০)= ১২ লাখ টাকা ঘুষ বানিজ্য করে থাকেন। তবে এতো বড় ঘুষ বানিজ্যের মধ্যে তার একটি মানবিকতাও রয়েছে। ২০ থেকে ৩০ টাকা দামের একটি সৌদি প্রবাসীদের ভাষা শিক্ষার বই উপহার দিয়ে থাকেন তিনি। এ বিষয়ে ভোলা জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান জানান, এ বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন এবং প্রমানিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।