বিনোদন প্রতিবেদক:- বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃক প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দীর্ঘ বিরতির পর স্বল্প পরিসরে খুলতে যাচ্ছে সংস্কৃতিকর্মী তথা নাট্য-প্রেমীদের প্রাণকেন্দ্র জাতীয় নাট্যশালার মূল থিয়েটার হল ও ২টি মহড়া কক্ষ। ১১ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় ‘বাংলাদেশ থিয়েটারে’র জনপ্রিয় হাসির নাটক ‘সি মোরগ’- এর ৩০১ তম মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে খুলবে জাতীয় নাট্যশালার দুয়ার। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন ও ছাত্র জনতার গণঅভ্যুন্থানের পর বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার বিভিন্ন কক্ষে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও সেনাসদস্যরা অবস্থান করছেন। ৫ আগস্ট ২০২৪ পরবর্তী সময় থেকে জাতীয় নাট্যশালার ৩টি মিলনায়তন, ৬টি মহড়া কক্ষ, সেমিনার কক্ষ, আর্কাইভ কক্ষ সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া তাই সম্ভব হয়নি। সে প্রেক্ষিতে গত ৭ অক্টোবর সকাল ১০টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সাথে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জাতীয় নাট্যশালার মূল থিয়েটার হল এবং ১ ও ২নং কক্ষ নাটক ও মহড়ার জন্য আগামী ১১ অক্টোবর থেকে সীমিত পরিসরে খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়াও হল ও মহড়া কক্ষ বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিদ্যমান নীতিমালার পাশাপাশি বিরাজমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় যেসব নির্দেশনা অনুসরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা হলো-
জাতীয় নাট্যশালার মূল হল, নাটক মঞ্চায়নের জন্য বিবেচ্য নাট্যদলকে ১ শিফটে একটি প্রদর্শনী করার জন্য বরাদ্দ দেয়া হবে। মিলনায়তন বরাদ্দ চূড়ান্ত করার সময় বরাদ্দপ্রাপ্ত দলকে অবশ্যই তাদের উপস্থিত সদস্যদের তালিকা সংগঠনের প্যাডে লিখিতভাবে নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের দপ্তর কক্ষে জমা দিতে হবে। উক্ত তালিকা মিলনায়তন ব্যবহারের নির্ধারিত দিনে সকল গেইটে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরবরাহ করা হবে। জাতীয় নাট্যশালার মূল গেইটে দর্শক প্রবেশের জন্য নাটক প্রদর্শনীর ২ ঘণ্টা আগে খুলে দেয়া হবে। হল বরাদ্দ ব্যতিত জাতীয় নাট্যশালার মূল গেইট খোলা হবে না। জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে যেসব সংগঠন/দল নাটক মঞ্চায়ন করবে, ২ টি মহড়া কক্ষ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বরাদ্দ দেয়া হবে। মিলনায়তন ব্যবহারকারী নাট্যদল মহড়া কক্ষ ব্যবহার করতে না চাইলে, অন্যদলকে কেবল নাটকের মহড়ার জন্য বরাদ্দ দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে বরাদ্দ প্রাপ্ত দলকে অবশ্যই সদস্যদের তালিকা সংগঠনের নিজস্ব প্যাডে লিখিতভাবে নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের দপ্তর কক্ষে দিতে হবে। মূল গেইট দিয়ে কেবল বরাদ্দ প্রাপ্ত সংগঠনের সদস্য, মহড়াকক্ষ ব্যবহারকারী সংগঠনের সদস্য, শিল্পকলা একাডেমির স্টাফ, সেনাসদস্য এবং টিকেট/আমন্ত্রণপত্র প্রদর্শনী সাপেক্ষে দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারবেন। কোনক্রমেই টিকেট বা আমন্ত্রণপত্র ছাড়া দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারবেন না। জাতীয় নাট্যশালার মূল হল ও মহড়া কক্ষ ব্যবহারকারী নাট্যকর্মী, সাংবাদিক ও টিকেট/আমন্ত্রণপত্রধারী দর্শনার্থীদের যানবাহন নির্ধারিত সময়ে নাট্যশালার নিচতলার পার্কিং ব্যতিত অন্য কোথাও রাখা যাবে না।
জাতীয় নাট্যশালার মূল থিয়েটার হল ব্যবহারের জন্য নাট্যসংগঠনগুলো অনলাইনে আবেদন করতে পারবে।
তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দীর্ঘদিন পর সীমিত পরিসরে হলেও নাট্যশালা খুলে দেয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করছেন নাট্যকর্মীরা। ‘বাংলাদেশ থিয়েটারে’র সিনিয়র সদস্য ইমন খান বলেন, “আমরা অত্যন্ত আনন্দিত আমাদের নাটকের মানুষ নাট্যনির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদ স্যারকে মহাপরিচালক হিসেবে পেয়েছি। আশা করছি সুস্থধারার সংস্কৃতি চর্চার স্থান হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তার হাত ধরেই সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড আরো বেগবান হবে। আমরা আরও বেশি আনন্দিত কারণ বিরতির পর আমাদের ‘বাংলাদেশ থিয়েটার’ এর দর্শকনন্দিত ব্যতিক্রমধর্মী জনপ্রিয় হাসির নাটক ‘সী-মোরগ’ মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে নতুন দিনের পথচলা শুরু হচ্ছে।”
জানা যায়, আসাদুল্লাহ ফারাজী রচিত “সী-মোরগ” নাটকটির নির্দেশনায় দিয়েছেন হুমায়ুন কবীর হিমু। নাটকটি ‘বাংলাদেশ থিয়েটারে’র ষষ্ঠ প্রযোজনা। নাটকটির কাহিনীতে তুলে ধরা হয়েছে জীবনের কোলাহলে তিন স্ত্রী, চার চাকর আর প্রাণপ্রিয় ‘সী-মোরগ’ নিয়ে এক রকম সুখের আবহে জীবন কাটাচ্ছিলেন জোতদার শিকদার। জলের নিম্নগামিতার মতো নিম্ন বয়সী স্ত্রীর প্রতি তার অধিক ভালবাসা, চাকরদের পিঠে কাজের বোঝা চাপিয়ে দেয়া তার বনিবনা আর হৃষ্টপুষ্ট সী মোরগের ঝুটি-পালক ছুঁয়ে সৌন্দর্যের অনুরাগ প্রকাশ তার উপার্জিত সম্পদের প্রতি সম্মাননা। তথাপি পিতা-মাতার ভালবাসার অর্থপূর্ণতায় তার জন্ম হলেও বিয়ের মাত্র এক মাসের মাথায় বাবার মৃত্যু যেমন লোক সমাজে তাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে তেমনি হঠাৎ সী-মোরগের নিরুদ্দশায় পাগলা বাবার কুমন্ত্রণা তাকে প্রতিটি সম্পর্কের ব্যাপারে শঙ্কিত করে তোলে। স্ত্রীদের প্রতি তার অবহেলাকে বড় না করে দেখে, সে ভাবে স্ত্রীরা বুঝি অন্য কোথাও আসক্ত। চাকররা ‘সী-মোরগ’ খুঁজে না পেলে, সে ভাবে চাকররাই বুঝি মোরগটাকে খেয়েছে বুভুক্ষের মতো। কুড়ি পাড়ার এক হিন্দু বাড়ির পাশে মোরগের পশম পেয়ে ওই হিন্দু বাড়ির দুই ভাইয়ের সহায়-সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে সে উন্মত্ত, এসব নিয়েই নাটকটির গল্প এগিয়ে যায়। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন খন্দকার শাহ্ আলম, রফিক উল্যাহ, মাসুদা খান, সুমি, ইমন খান, আখতার, ফিরোজ খান, আজিজ রেজা, রাজা, রনি আক্তার, সুমন, রাতুল, মোস্তাফিজ, তানভীর, খালিদ মাহমুদ সাওন, সৈকত, মিল্টন, দর্পণসহ আরও অনেকে।